সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

দেশে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ

দেশে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে করোনা ভাইরাসের সুপার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ জনের শরীরে এ ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত হয়েছে। এমনকি বেড়েছে দৈনন্দিন সংক্রমণের হারও। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। গণপরিবহন, কাঁচাবাজার, মার্কেট সব স্থানেই স্বাস্থ্যবিধি এক প্রকার অনুপস্থিত। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। ওমিক্রনের প্রভাবে দেশে আবার করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হতে পারে। এমনকি লকডাউনের দিকেও যেতে পারে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টা এবং ওমিক্রন করোনা পৃথক দুটি ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন। তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যও আলাদা। গঠন আকৃতি ভিন্ন। অন্য যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এর পার্থক্য রয়েছে। যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণশীলতা অনেক বেশি। এর রি-ইনফেকশন বা সেকেন্ডারি ইনফেকশনের হার বেশি। অর্থাৎ যারা আগে সংক্রমিত হয়েছেন বা টিকা নিয়েছেন, তারাও সংক্রমিত হতে পারেন। তারা বলছেন, আমাদের দেশে জিনম সিকুয়েন্স খুবই কম হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত জিনম সিকুয়েন্সিংয়ের পরিসর বাড়ানো। তা হলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওমিক্রনের হানা থেকে সারা পৃথিবীর চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। ইতোমধ্যে প্রতিষেধক হিসেবে করোনার মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট দেশের বাজারে এসেছে। তবে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে আবার কঠোর বিধিনিষেধ আসতে পারে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ওমিক্রনে যুক্তরাজ্যে এক লাখ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে। আমাদের দেশে এই অবস্থা দেখতে চাই না। আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রাথমিকভাবে মাস্ক সংক্রমণ ঝুঁকি কমাবে। সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমরা কঠোরতা অবলম্বন করব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওমিক্রনের সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালগুলোকে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোয় সাবধানতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে দেশে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ২৩ দফা নির্দেশনা জারি করছে। এমনকি বিদেশ থেকে আসা সব নাগরিকের এন্টিজেন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বিমানবন্দরে এবং অন্য বন্দরগুলোয় র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন বসানো উচিত। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের নড়েচড়ে বসা উচিত। বিশেষ করে বিমানবন্দরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা আসছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা আসছেন তাদের বিমানবন্দরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশে প্রবেশ করছে, তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্দরগুলোয় র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন বসাতে হবে। পরীক্ষায় যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ হবেন তাদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। তা ছাড়া মানুষকে সচেতন করতে হবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, এভাবে দেশে ওমিক্রনের ব্যাপক সংক্রমণ বিলম্বিত করা সম্ভব হবে। তবে সংক্রমণের ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে, রোগী বাড়ে এবং হাসপাতালে শয্যা পূর্ণ হয়ে যায়, তা হলে লকডাউনের দিকে যেতে হবে।

এদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে ২০২২ সালের প্রথম দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৮ হাজার ৭৬ জনে। একই সময়ে দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৭০ জন। এ নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯০৯ জনে। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় দেশের সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ১৫ হাজার ৭৪টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৫ হাজার ২১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে আসা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কাছে অবস্থান হারাচ্ছে। ওমিক্রনের আধিপত্যশীল হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি কিছু কিছু দেশে ওমিক্রনের স্থানীয় সংক্রমণ এবং উচ্চস্তরের ইমিউনিটি থাকা লোকজনের আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি বাড়ছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম আমাদের সময়েকে বলেন, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে এর আগে আমরা ২৩ দফা প্রস্তাবনা দিই। সেই ২৩ দফা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও তার আলোকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877